প্রকাশিত: Sun, Jul 30, 2023 11:36 PM
আপডেট: Tue, Jul 1, 2025 2:06 AM

[১]একদিকে বিএনপির আন্দোলন, অন্যদিকে বিদেশি চাপ [২]রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী করাই আওয়ামী লীগের কৌশল

এল আর বাদল: [৩] বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গেলো একযুগ ধরে যে দ্বন্দ্ব, সেটা মূলতঃ চলছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কঠোর আন্দোলনের কৌশল নিয়েছিলো বিএনপি। কিন্তু সে আন্দোলন সফল হয়নি। কৌশলের খেলায় জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সূত্র: বিবিসি বাংলা

[৪] অনেকেই মনে করেন, বিএনপির নির্বাচন বর্জন ছিলো আওয়ামী লীগের ফাঁদে পা দেওয়া। আওয়ামী লীগ সেসময় বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো চেষ্টাই করেনি। বরং দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করে। আর রাজপথে নেয় বিএনপিকে ঠেকানোর কৌশল। 

[৫] নির্বাচনে দেড়শো’রও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় ছিলো বড় চমক। এসবের কোন জবাব ছিলো না বিএনপির কাছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপিকে নির্বাচনে এনে অংশগ্রহণমূলক ভোটের আয়োজন করতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ।

[৬] খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের মতো শীর্ষ নেতাদের সাজা, দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা এবং পরপর দুটি নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সামলাতে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি।

[৭] নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সরকারের সঙ্গে সংলাপও করে বিএনপি। কিন্তু বিতর্কিত সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি দলটি। রাজনৈতিক কৌশলের খেলায় সেবারও জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেকেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সামনে বেশ কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।

[৮] একদিকে বিএনপির জোরদার আন্দোলন, অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ। এমন অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কৌশল কী হতে যাচ্ছে?

[৯] বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় সে বিষয়ে বিদেশিদের চাপ আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এটাও ঠিক, সে নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে সে বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর নির্দিষ্ট কোন বক্তব্য নেই। আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চায়।

[১০] এর বিপরীতে বিএনপি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপি যদি আবারো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তাহলে আবারো বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

[১১] বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেও আলোচনা আছে। তারা মনে করছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সেখানে বিএনপির না থাকা বড় কোন সংকটের কারণ হবে না কিংবা গ্রহণযোগ্যতার সংকট তৈরি করবে না।

[১২] আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে এটাই বড় কথা। বিএনপি বা অন্য কোন দল না এলে আওয়ামী লীগ কারো জন্য অপেক্ষা করবে না।

[১৩] আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই তৃণমূলে দলীয় কর্মসূচি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করা। ইতোমধ্যে আগামী ৬ আগস্ট ঢাকায় তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে দলটি।

[১৪] আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, বর্ধিত সভা থেকেই তৃণমূলে নির্বাচনী প্রস্তুতির বার্তা দেয়া হবে। দলের বাইরে মহাজোটের শরীক দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ।

[১৫] সম্প্রতি মহাজোটের শরীক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া নির্বাচনের আগে অক্টোবরের মধ্যেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলের পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন ডিসেম্বরের বদলে এগিয়ে আনা হয়েছে অক্টোবর মাসে।

[১৬] এসব কিছুর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ চায় দেশের ভেতরে রাজনীতিতে একটা নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে। সবমিলিয়ে বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের বিপরীতে রাজপথে পাল্টা কর্মসূচি আর নির্বাচন নিয়ে বিদেশি চাপের বিপরীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনীতিকে নির্বাচনমুখী করা- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কৌশল আপাতত এটাই। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব